রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
কামরুল আহসান হাসান।।
বৃদ্ধাশ্রম হলো মূলত বৃদ্ধ নারী-পুরুষের আবাসস্থল। যেখানে বৃদ্ধদের আলাদা আলাদা রুমে রাখা হয়। ভবনের মধ্যেই তাদের দেয়া হয় খাবার, চিত্তবিনোদন এবং অসুস্থতাজনিত সেবা। কিন্তু সেখানে থাকে না খুব কাছের আত্মীয়-স্বজন বা ছেলে-মেয়ে। অথচ শেষ বয়সে যাদের সান্নিধ্য পাওয়া খুবই জরুরী। কেন বৃদ্ধরা তাদের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ অধিকার তথা আশ্রয় এবং বাসস্থন থেকে বঞ্ছিত হচ্ছেন? বৃদ্ধাশ্রম নিয়ে রূপালী বার্তার তিন পর্বের ধরাবাহিকের আজ থাকছে দ্বিতীয় পর্ব।
স্বভাবগত ভাবেই বাবা মা সন্তানকে মন থেকেই বলে থাকেন ‘ছেলে মেয়ে সুখে থাকলেই আমরা সুখি, আমাদের সম্পদ তো সন্তানদের জন্যই’। সন্তানেরা এটাকে দুর্বলতা ভেবে বাবা মায়ের কষ্টার্জিত সম্পদসহ নিজের অর্জিত সম্পদও নিজেই করায়ত্ত বা ভোগ করার মানসিকতা তৈরি করে। সন্তানের অর্জিত সম্পদের প্রতি পিতা-মাতার যে হক (প্রাপ্য) আছে তা ভুলে যান। বরং কবে কখন বাবা মায়ের সম্পদ নিজের আয়ত্তে নিবে তার জন্য যতটা পেরেশান হন, ততটাই বেখেয়াল থাকেন বাবা মায়ের সুখ ও শান্তির জন্য।
সবচেয়ে কম মুল্যের পোশাক ও বাসার সংকীর্ণ রুম স্বইচ্ছায় বেছে নিতে বাবা মায়ের কোন আপত্তি বা কষ্ট থাকে না, বরং এতেই যেন সুখ খুঁজে পান। খাবারের বেলাতেও ঠিক এমনটাই হয়ে থাকে, তাদের স্বেচ্ছাকৃত ভাবেই। এত কিছুর পরও বাবা-মা সন্তানের হাসি মিশ্রিত মুখ দেখামাত্র নিমিষেই সব কষ্ট ভুলে যান। কিন্তু নুয়ে পড়া শরীর বা ভাঁজ পরা চোখের নিচে কখন জল আটকে রাখার ক্ষমতা বাবা-মা হারিয়ে ফেলেন, যখন দেখেন যাদের নিয়ে এত স্বপ্ন দেখেছেন তাদের নিকট থেকে অশ্রদ্ধা-অবহেলা আর নিগৃহীত হওয়া ছাড়া কোন প্রাপ্তি নেই।
আজ তারা অচল হয়েছেন বলে তাদের দেখার মতো কেউ নেই। অথচ এই সন্তানও একদিন অচল অবস্থায় আল্লাহর ইচ্ছায় দুনিয়াতে এসেছিলেন। সেদিন বাবা মা যদি একটুক্ষণের জন্য অবহেলা করতেন, তাহলে আজ এত বড় হওয়া বা উঁচু স্থানে ওঠা সম্ভব হত না। অতীতের স্মৃতিময় দিনগুলো স্বরণ করে যখন বাবা মা নির্বাক তাকিয়ে থাকেন বা চুপ হয়ে যান, হয়ত সন্তানের চোখে তা পড়ে না বা হৃদয়ে নাড়া দেয় না।
সন্তানরা তখন নিজেকে গোছানোর এক স্বপ্নঘোরে আটকে যায়। কিন্তু এই নির্বাক ও চুপ হয়ে যাওয়ার পিছনে সুপ্ত আছে একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস যা কিনা বাবা মায়ের পক্ষ থেকে অভিশাপ না হলেও বাস্তবিক পক্ষে স্রষ্টার নজরে কিন্তু এড়ায় না। চলবে…
(প্রিয় পাঠক বৃদ্ধাশ্রম নিয়ে আজ প্রকাশিত হলো দ্বিতীয় পর্ব। আগামী শুক্রবার (১১ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত হবে তৃতীয় ও শেষ পর্ব, আশা করি রূপালী বার্তার সঙ্গেই থাকবেন। লেখাটি ভালো লাগলে লাইক দিন, শেয়ার করুন)